আমার কি কোনো ক্ষোভ আছে?
ক্ষোভ মানুষের এক স্বাভাবিক অনুভূতি। আমরা প্রত্যেকেই জীবনের বিভিন্ন সময়ে ক্ষোভ, অভিমান কিংবা হতাশার মধ্যে পড়ে যাই। ক্ষোভ সাধারণত জন্ম নেয় তখনই, যখন প্রত্যাশা আর বাস্তবতার মধ্যে ফারাক থেকে যায়। কারও কাছ থেকে আমরা যেটুকু ভালোবাসা, সম্মান বা আন্তরিকতা আশা করি, সেটা না পেলে আমাদের ভেতরে অস্বস্তি জমতে শুরু করে। আর সেই অস্বস্তি সময়ের সঙ্গে ক্ষোভে রূপ নেয়।
আমার ক্ষেত্রেও ক্ষোভ বলতে আসলে মানুষকে ঘিরেই। কারণ আমি বিশ্বাস করি, মানুষ যদি একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করত, যদি মন থেকে সাহায্য করত, তবে পৃথিবী আরও সুন্দর হতো। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনেকে শুধুই নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখে। এর ফলে সম্পর্ক নষ্ট হয়, আস্থা ভেঙে যায়, আর ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ জমে ওঠে।
ক্ষোভের আরেকটি জায়গা হলো সমাজব্যবস্থা। অনেক সময় দেখা যায়, পরিশ্রমী মানুষ যথাযথ সম্মান পায় না, অথচ সুযোগসন্ধানীরা খুব সহজে উন্নতির সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। এই বৈষম্য, এই অবিচার মনের মধ্যে এক ধরনের অশান্তি তৈরি করে। তখন প্রশ্ন জাগে—"ন্যায় কি সত্যিই আছে?" এই প্রশ্নই ক্ষোভকে আরও তীব্র করে তোলে।
তবে ক্ষোভ সবসময় নেতিবাচক নয়। যদি আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করি, ক্ষোভ হতে পারে পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা। ক্ষোভ আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে শেখায়, আমাদের নীরব না থেকে প্রতিবাদ করতে উৎসাহিত করে। এটা আমাদের ভেতরের শক্তিকে জাগিয়ে তোলে।
তাই আমি বলব, হ্যাঁ, আমারও ক্ষোভ আছে—অন্যায়ের প্রতি, ভণ্ডামির প্রতি, অবহেলার প্রতি। কিন্তু সেই ক্ষোভকে আমি ধ্বংসাত্মক পথে না নিয়ে গঠনমূলক কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। আমি চাই আমার ক্ষোভ সমাজ পরিবর্তনের জন্য শক্তি হয়ে উঠুক। কারণ দিনের শেষে ক্ষোভ যদি ভালো কিছুর জন্ম দেয়, তবেই তা সার্থক।
আমার কি কোনো ক্ষোভ আছে? (বিস্তারিত ব্যাখ্যা নিম্নেঃ)
ক্ষোভ আসলে মানুষের ভেতরের এক গভীর অনুভূতি। এটি এমন এক মানসিক অবস্থা, যা সাধারণত হতাশা, অবহেলা কিংবা অন্যায়ের কারণে তৈরি হয়। প্রত্যেক মানুষই নিজের জীবনে কিছু না কিছু ক্ষোভ নিয়ে বেঁচে থাকে—কেউ সম্পর্কের কারণে, কেউ সমাজব্যবস্থার কারণে, আবার কেউ নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে না পারার কারণে।
আমার ক্ষোভ প্রথমেই জন্ম নেয় মানুষের ভণ্ডামি দেখে। বাইরে থেকে সবাই খুব ভালোবাসার মুখোশ পরে থাকে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে অনেকের মনে থাকে স্বার্থ আর প্রতারণা। যখন দেখি মানুষ শুধু নিজের সুবিধার জন্য অন্যকে ব্যবহার করে, তখন মনে গভীর ক্ষোভ জমে ওঠে। আমি বিশ্বাস করি—আন্তরিকতা আর সততাই সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখে। অথচ বাস্তব জীবনে সেগুলোর অভাবই বেশি চোখে পড়ে।
এরপর আসে সমাজের প্রতি ক্ষোভ। একটি শিশু যখন শিক্ষার অধিকার বঞ্চিত হয়, কোনো পরিবার যখন দারিদ্র্যের কারণে মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে না, তখন মনের ভেতর প্রশ্ন জাগে—কেন বৈষম্য এত গভীর? কেন কিছু মানুষ অপচয় করে, আর অন্যরা না খেয়ে থাকে? এই অবিচার আর বৈষম্যের দৃশ্যগুলো আমাকে কষ্ট দেয় এবং ক্ষোভের জন্ম দেয়।
আমার ক্ষোভের আরেকটি দিক হলো প্রত্যাশা পূরণ না হওয়া। আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি—সুন্দর জীবন, সম্মান, ভালোবাসা, সাফল্য। কিন্তু বাস্তবতা অনেক সময় স্বপ্নকে ভেঙে দেয়। যখন নিজের পরিশ্রম অনুযায়ী ফল পাওয়া যায় না, তখন ভেতরে ক্ষোভ জন্ম নেয়।
তবে আমি মনে করি, ক্ষোভকে দমন না করে সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত। যদি ক্ষোভ কেবল হৃদয়ে জমে থাকে, তাহলে তা আমাদের ভেতরকে পুড়িয়ে দেয়। কিন্তু যদি আমরা সেই ক্ষোভকে প্রেরণায় পরিণত করি, তাহলে তা সমাজ পরিবর্তনের শক্তি হয়ে উঠতে পারে। যেমন—অন্যায়ের প্রতি ক্ষোভ আমাদের প্রতিবাদী করে তোলে, বৈষম্যের প্রতি ক্ষোভ আমাদের সমতার জন্য লড়তে শেখায়, অবহেলার ক্ষোভ আমাদের আরও শক্তিশালী হতে উদ্বুদ্ধ করে।
সবশেষে বলব, হ্যাঁ, আমার ক্ষোভ আছে। কিন্তু সেটা ব্যক্তিগত প্রতিশোধের ক্ষোভ নয়, বরং একটি সুন্দর পৃথিবীর প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার ক্ষোভ। আমি চাই আমার ক্ষোভ হোক পরিবর্তনের হাতিয়ার—যাতে একদিন সবাই ন্যায়, ভালোবাসা আর সমতার মধ্যে বাঁচতে পারে।